Thursday, April 6, 2017

হোমো ডিউস - আগামির এক সাময়িক ইতিহাস

১. নতুন মনুষ্য লক্ষ্য
তৃতীয় সহস্রাব্দের সূচনাকালে, মানবজাতি জেগে উঠে, তার অঙ্গগুলো প্রসারন করে এবং চোখগুলো ঘষে। কিছু দুঃসহ দুঃস্বপ্নের অবশিষ্টাংশ তখনো তার মনে ভেসে বেড়াচ্ছে। “ওখানে কিছু একটা ছিলো, কাটাতারের বেড়া এবং বড় আকারের ব্যাঙের ছাতাকৃতি মেঘসহকারে। যাই হোক, এটা স্বপ্ন ছিলো।” বাথরুমে গিয়ে, মানবজাতি তার মুখ ধুলো, তার ভাজগুলো আয়নাতে দেখলো, এককাপ কফি বানালো এবং ডায়রি খুললো। “দেখি আমাদের লক্ষ্যে কি আছে আজ।”
হাজারখানেকবছর ধরে এই প্রশ্নের উত্তর অপরিবর্তিত রয়ে গেছে। একই তিন সমস্যা আগে থেকে জড়িয়ে রেখেছে বিংশ শতাব্দীর চীন, মধ্যযুগীয় ভারত এবং প্রাচীন মিশরকে। দুর্ভিক্ষ, মড়ক এবং যুদ্ধ সবসময়ে তালিকার উপরে ছিলো। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে মানুষ প্রার্থনা করেছে প্রত্যেক ইশ্বর, স্বর্গদূত এবং দরবেশদের কাছে, এবং আবিষ্কার করেছে অগনিত যন্ত্র, সংস্থা এবং সামাজিক প্রথা - কিন্তু তারা মরতেই থাকলো, মিলিয়ন পরিমানে, দুর্ভিক্ষ, মড়ক ও হিংস্রতা থেকে। বহু চিন্তাবিদ ও নবীরা উপসংহারে পৌছায় যে দুর্ভিক্ষ, মড়ক এবং যুদ্ধ অবশ্যই ইশ্বরের পরিকল্পনার অবিচ্ছেদ্য অংশ অথবা আমাদের অনুৎকৃষ্ট প্রকৃতির, এবং সময়ের শেষপ্রান্ত ছাড়া অন্যকিছুই তাদের ঠেকাবে না।
অথচ, তৃতীয় সহস্রাব্দের শুরুতে, মানবজাতি জেগে উঠলো এক আশ্চর্যজনক উপলদ্ধির মধ্যে। অধিকাংশ জনগন বিরল পরিমানে চিন্তা করে ব্যাপারটা নিয়ে, কিন্তু গত কয়েক দশকে আমরা দুর্ভিক্ষ, মড়ক এবং যুদ্ধে লাগাম দিতে পেরেছি। অবশ্যই, এই সমস্যাগুলো সম্পূর্ণ সমাধান হয়নি, কিন্তু তারা পরিবর্তিত হয়েছে, বোধঅযোগ্য ও নিয়ন্ত্রনঅযোগ্য প্রাকৃতিক বল থেকে ব্যবস্থাযোগ্য প্রতিপক্ষে। এদের হাত থেকে রেহাই পেতে আমাদের দরকার পড়েনা কোনো ইশ্বর বা দরবেশের কাছে প্রার্থনা করতে। আমরা বেশ ভালো জানি যে দুর্ভিক্ষ, মড়ক ও যুদ্ধ রোধ করতে কি করা লাগবে - এবং আমরা সাধারনত তাতে সফল হই।
সত্য, এখনো উল্লেখযোগ্য ব্যর্থতা আছে; কিন্তু যখন এরকম ব্যর্থতার সম্মুখীন হই, আমরা আর কাধ ঝাড়িনা এবং বলিনা, “ভালো, এভাবেই সবকিছু কাজ করে আমাদের অনুৎকৃষ্ট জগতে।” অথবা “ইশ্বরের ইচ্ছায় সব হবে।” বরং, যখন দুর্ভিক্ষ, মড়ক অথবা যুদ্ধ আমাদের নিয়ন্ত্রনের বাইরে ভেংগে বের হয়ে যায়, আমরা অনুভব করি যে কেউ হয়তো ভুল ফালিয়েছে, আমরা তদন্ত কমিশন গঠন করি এবং নিজেদের শপথ নেই যে পরবর্তীকালে আমরা এর চেয়ে বেশি ভালো করবো।এবং তা আসলেই কাজ করে। এরকম বিপর্যয় আসলেই ঘটে আরো কম বারবার। ইতিহাসে প্রথম বার, কম খেয়ে মরা লোকের চেয়ে বেশি খেয়ে মরা লোকের সংখ্যা বেশি; সংক্রামক রোগে মরার চেয়ে বুড়া হয়ে মরে বেশি; এবং সৈন্যের হাতে হত্যা হবার চেয়ে বেশি লোক আত্মহত্যা করছে। একবিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে, গড় সংখ্যক মানুষের সম্ভাবনা বেশি ম্যাকডোনাল্ডসে খাওয়ার প্রতিযোগীতায় মরা, খরা ইবোলা আল কায়েদার হাতে মরার তুলনায়।
তাই যদিও প্রেসিডেন্ট, সিইও, জেনারেলদের দৈনিক সময়সূচী অর্থনৈতিক সংকট ও সামরিক সংকটে ভরপূর, ইতিহাসের মহাজাগতিক মাত্রাতে মানবজাতি তার চোখ তুলে নতুন দিগন্তের দিকে তাকাতে পারবে। আমরা যদি আসলেই দুর্ভিক্ষ, মড়ক এবং যুদ্ধকে নিয়ন্ত্রনে আনছি, মানবজাতির লক্ষ্যতালিকার উপরের দিকে তাদেরকে কারা প্রতিস্থাপন করবে? অগ্নিকান্ড বিহীন বিশ্বে দমকলকর্মীদের মতোই, একবিংশ শতাব্দীতে মানবজাতি তার নিজেকে এক পূর্বপ্রস্তুতিহীন প্রশ্ন জিজ্ঞেস করতেই হবে: আমরা নিজেদের নিয়ে কি করবো? একটি স্বাস্থ্যবান, সমৃদ্ধশালী ও সহবস্থানময় জগতে, কি আমাদের মনোযোগ ও বুদ্ধিমত্তাকে আকর্ষন করবে? এই প্রশ্ন দ্বিগুন জরুরি হয়ে পড়ে, জৈবপ্রযুক্তি ও তথ্যপ্রযুক্তি আমাদের যে কড়া নতুন ক্ষমতা দিচ্ছে, তার হিসাবে।আমরা কি করবো এত ক্ষমতা দিয়ে?